আলোচনায় হালকা প্রকৌশল শিল্পসংশ্লিষ্টরা

যুক্তরাজ্যে বাজার সম্প্রসারণে পণ্য যাচাই ও কাঁচামালে আমদানি শুল্ক বড় বাধা

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাজ্যে ২০২১ সালে হালকা প্রকৌশল পণ্যের বাজার ছিল ৩২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের। অথচ ওই বছর এ খাতে দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিল মাত্র ৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। রফতানি আয়ের এ ক্ষুদ্র অংশের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বাইসাইকেল রফতানির পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। যদিও একই বছর অন্যান্য দেশ থেকে মোট ৫১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বাইসাইকেল আমদানি করে যুক্তরাজ্য। 

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘যুক্তরাজ্যের বাজারে রফতানি সম্প্রসারণ: হালকা প্রকৌশল শিল্প’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে আসে। ইউকেএইডের সহায়তায় রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 

সভায় হালকা প্রকৌশল শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলেন, আমদানি খাতে যুক্তরাজ্যে চলতি বছর উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাণিজ্যনীতি-ডিসিটিএস চালু করেছে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০২৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত শুল্ক সুবিধার পণ্য সম্প্রসারণ করতে পারে। এতে যুক্তরাজ্য থেকে পশ্চিমা দেশগুলোয় বাইসাইকেল, পরিবহন যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, কাস্টিং পণ্য ও মেশিনারিজের বিশাল বাজার ধরার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের হাতে। কিন্তু পণ্য রফতানিতে বড় প্রতিবন্ধকতা বাংলাদেশের সরকারি সার্টিফিকেশন বা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া, কাঁচামাল আমদানিতে অত্যধিক শুল্ক আদায়।

সভায় বিভিন্ন হালকা প্রকৌশল শিল্পের প্রতিনিধিরা বলেন, নিজস্ব ব্র্যান্ড না হলেও সারা বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প শীর্ষ অবস্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশে তৈরি হালকা প্রকৌশল পণ্যও বিশ্ব সেরা। কিন্তু এ খাতের বায়ার বা সাপ্লাই চেইনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারছে না বলে ভিয়েতনাম, তাইওয়ানের চেয়ে রফতানিতে আমরা পিছিয়ে। প্রতিবন্ধকতাগুলো কাটিয়ে যুক্তরাজ্যে রোড শো ফেয়ারে অংশগ্রহণ এবং দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে ফ্যাক্টরি ভিজিট করা গেলে, সম্ভাবনাময় এ খাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। 

বাংলাদেশ বাইসাইকেল অ্যান্ড পার্টস ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিবিপিএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ মুশতাক আহমেদ তানভীর বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে লিথিয়াম আয়ননির্ভর ইলেকট্রিক বাইসাইকেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেসব দেশে চাহিদার একটা অংশ তৈরিও হচ্ছে। ইলেকট্রিক বাইসাইকেল রফতানিতে অধিক শুল্ক আরোপের কারণে আমরা লিথিয়াম ব্যাটারি প্রস্তুত করে পাঠাতে পারি।’ 

সুপার স্টার গ্রুপের পরিচালক শেখ সাদী আব্দুল মজিদ বলেন, ‘ইলেকট্রিক পণ্য রফতানিতে সিএস সার্টিফিকেটের দরকার হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ ল্যাব না থাকায় বৈদ্যুতিক কেবলসের মান সিঙ্গাপুর থেকে যাচাই করতে হয়। একই জটিলতায় আমরা টিস্যু পেপার রফতানি করতে পারছি না। 

র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, ‘তৈরি পোশাক শিল্প নিজস্ব ব্র্যান্ডের বাইরে রফতানি করছে। হালকা প্রকৌশল শিল্পও সেভাবে যুক্তরাজ্যের বাজারে প্রবেশ করতে পারে।’ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিনিধি মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে অন্যান্য পণ্য রফতানি করছি। তারা তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে খুশি হলেও হালকা প্রকৌশল শিল্প নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কারণ অর্ডার পেলে চীন থেকে কাঁচামাল আনতে মাস খানেক সময় লাগে। এ সুযোগে অন্য দেশ দ্রুত পণ্য সরবরাহ করছে।’

র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘২০৩০ সালের আগ পর্যন্ত ৯৫টি দেশ বাণিজ্য চুক্তি-ডিসিটিএস অনুযায়ী, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আওতায় পরস্পর কৃষি মেশিনারিজ, হালকা প্রকৌশল, অটোমোবাইল পণ্য বা যন্ত্রাংশ আমদানি-রফতানি করতে পারে। ভূ-রাজনৈতিক কারণে চীনের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য এ সুবিধা দেবে না। ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যের বাজারে তৈরি পোশাক খাতে মোট চাহিদার ৩৫ শতাংশ সরবরাহ করত চীন, এখন তা ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে। তখন বাংলাদেশ ছিল ৩ শতাংশে, এখন ২৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের সামনে অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে, সমস্যাগুলো দূর করতে আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

সভার প্রধান অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) মো. আব্দুর রহিম খান বলেন, ‘১৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য সরকারের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যৌথ সভা রয়েছে। সেখানে কীভাবে পণ্য পাঠানো যায়, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। দু-এক মাসের মধ্যে কেবিনেটে ট্যারিফ পলিসি যাবে। সেটা পাস হলে রাজস্ব জটিলতাও কমে আসবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন